নারীবাদী লেখিকা,সমাজ সংস্কারক ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক কামিনী রায়কে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ।

                                       সুস্মিত মিশ্র      

"আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে 
আসে নাই কেউ অবনী পরে-
সকলের তরে সকলে আমরা 
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে" 
  বাংলার প্রথম মহিলা স্নাতক তথা কবি কামিনী রায় আজ বিস্মৃতপ্রায়।বাঙ্গালী এই কবি ও সমাজকর্মীকে তাঁর ১৫৫তম জন্মদিনে গুগল তার ডুডলের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে 
তুলে ধরলেও আমরা থেকেছি উদাসীন।১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর পূর্ববঙ্গের বর্তমান বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জের বাসণ্ডা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।তাঁর পিতা চণ্ডীচরণ সেন 
একজন ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী, বিচারক ও ঐতিহাসিক লেখক ছিলেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে চণ্ডীচরণ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা লাভ করেন। পরের বছর তার স্ত্রী-কন্যাও কলকাতায় তার কাছে 
ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। তিনি ব্রাহ্ম সমাজের বিশিষ্ট নেতা ছিলেন। তাঁর ভগিনী যামিনী সেন লেডি ডাক্তার হিসেবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। 

কন্যা কামিনী রায়ের প্রাথমিক শিক্ষার ভার চণ্ডীচরণ সেন নিজে গ্রহণ করেন। বার বৎসর বয়সে তাকে স্কুলে ভর্তি করে বোর্ডিংয়ে প্রেরণ করেন।১৮৮৩-তে এফএ বা ফার্স্ট 
আর্টস বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হন কামিনী। ১৮৮৬-তে ভারতের প্রথম নারী হিসেবে সংস্কৃত ভাষায় সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৮৮৬ সালেই তিনি বেথুন কলেজের স্কুল বিভাগে শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি সেই কলেজে অধ্যাপনাও করেছিলেন। যে যুগে মেয়েদের  
শিক্ষা বিরল ঘটনা ছিল, সেই সময়ে কামিনী রায় নারীবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তার অনেক প্রবন্ধেও এর প্রতিফলন ঘটেছে।তিনি একসময় "জনৈক বঙ্গমহিলা" ছদ্মনামে লিখতেন।
খুব কম বয়স থেকেই কামিনী রায়ের কবিসত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লিখতেন। ১৮৮৯ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া প্রকাশিত
 হয়।সময়ের নিয়মেই বইটিতে কামিনী রায়ের নাম প্রকাশিত হয়নি। তবে মুখে মুখে তাঁর কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে অল্প সময়েই। রবীন্দ্রনাথকেই গুরুর আসন দিয়েছিলেন কামিনী রায়।
 রবীন্দ্রনাথ তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনাও করেছেন।তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে -
আলো ও ছায়া 
নির্মাল্য 
পৌরাণিকী 
গুঞ্জন 
মাল্য ও নির্মাল্য 
অশোক সঙ্গীত 
অম্বা 
দীপ ও ধূপ 
জীবন পথে 
একলব্য
দ্রোণ-ধৃষ্টদ্যুম্ন
শ্রাদ্ধিকী 
শুধু কবিতা লেখাই নয়, বেথুন কলেজের স্কুল বিভাগের শিক্ষিকা কামিনী রায় নারী আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন। নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য ‘বালিকা শিক্ষার আদর্শ’ নামক 
গ্রন্থটি লেখেন তিনি। নারী শ্রম তদন্ত কমিশন গঠনেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল।১৯৩৩ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর হাজারিবাগে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ডিগ্রিধারী
নারীবাদী লেখিকা,সমাজ সংস্কারক মহিয়সী কামিনী রায়কে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে এখন সংবাদ পরিবার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন