১১৯ তম জন্ম দিবসে দেশের দ্বিতীয় প্রধান মন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে শ্রদ্ধাঞ্জলী

                                           সুস্মিত মিশ্র

১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন শাসিয়েছিলেন। ভারতবাসীর মুখ থেকে অন্ন কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেন নয়তো তাঁর দেশ লাল-গমের রপ্তানি বন্ধ করে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।দেশ এবং দেশের জনগণের মধ্যে যেকোনও একজনকে বাছাই করার কঠিন সিদ্ধান্তের মধ্যে পড়তে হয়েছিল দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রীকে।মতভেদে তৃতীয়,যদি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী গুলজারি লাল নন্দকে ধরা হয় । মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকীর জেরে একদিকে ছিল জনগণকে খেতে না পাওয়ার পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করা এবং অন্যদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কাশ্মীরে দেশের সীমানা সুরক্ষিত রাখা।খুব খারাপ পরিস্থিতিতেও নিজের উৎসাহ হারাননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নির্লিপ্তভাবে বলেন, “আপনি ভারতে লাল-গমের সরবরাহ বন্ধ করতেই পারেন। আপনি যদি পাঠানও আমরা আর গ্রহণ করব না।” তাঁর এই কঠোর জবাবে খুব বড় ধাক্কা খায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর দেওয়া হুমকিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভারতীয় সেনাদের ফিরিয়ে আনবে।শত্রুর জন্যে এমনই কঠোর ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।আজ তাঁর ১১৯তম জন্ম দিন।১৯০৪ সালের ২ অক্টোবর জন্ম গ্রহন করেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। তাঁর আর গান্ধীজীর জন্ম দিনের তারিখ একই হওয়ায় বারবার প্রচারের আলো থেকে ঢাকা পড়ে যান তিনি।

উত্তর প্রদেশের  মুঘলসরাইর চন্দাউলিতে  এক  কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লালবাহাদুর।তার বাবা সারদা প্রসাদ শ্রীবাস্তব প্রথমে স্কুল শিক্ষক ছিলেন পরে তিনি  এলাহাবাদের রাজস্ব অফিসের একজন কেরানি ছিলেন।তার বাবা মারা যান যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১ বছর। তার মা রামদুলারী দেবী তাকে তার বাবা ও বোনেদের কাছে নিয়ে যান এবং সেখানে তারা বসবাস করা শুরু করেন।

দরিদ্র পরিবারের ছেলে। সেখান থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার দু’বছরের মাথায় মৃত্যু। তার পর ৫৬ বছর কেটে গিয়েছে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে।


তিনি কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে প্রথম শ্রেণীর স্নাতক পাশ করেন ১৯২৬ সালে।শাস্ত্রী উপাধি তাঁকে কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে দেওয়া হয় আর সেটা তার নামের সাথেই আজীবন থেকে যায়। ১৯২০ সালে তিনি  স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে তিনি প্রথমে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও পরে জওহরলাল নেহ্‌রুর একজন বিশ্বস্ত অনুগামী হয়ে ওঠেন। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে জওহরলাল নেহ্‌রুর মন্ত্রীসভায় প্রথমে রেলমন্ত্রী হিসেবে ও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যোগদেন।নেহেরুর আচমকা প্রয়ানে শাস্ত্রীকে তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে বাছাই করা হয়

১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাক যুদ্ধে নায়ক ছিলেন শাস্ত্রী। তার বিখ্যাত স্লোগান "জয় জওয়ান, জয় কিষান" সেই সময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। এমনকি এখনও এই স্লোগান মানুষে মনে রেখেছে। ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি তাশখন্দে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এবং পরের দিন ওখানে শাস্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে সময় মৃত্যুর কারণ হিসেবে ভারত শাস্ত্রী হৃদরোগে মারা গেছে বলে প্রচার করলেও তার পরিবার তা অস্বীকার করে তদন্তের দাবি তোলে। ভারত মনে করে শাস্ত্রীর মৃত্যু তদন্ত যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই হৃদরোগেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে।
১৯৬২ সালে চিন-ভারতের যুদ্ধের পর ভারত একটি বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল। সাধারণ মানুষ চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে সহবাস করছিল। একমুঠো খাবারের জন্য তখন সংগ্রাম করতে হত। যে পরিস্থিতিতে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন তখন সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ছিল তাঁর কাছে একটা বড় পরীক্ষা।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার কিছু মাস পরেই আরেকটা ঝড়ের সম্মুখীন হন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৬৫ সালের ৫ অগাস্ট ৩০ হাজার পাকিস্তানি সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় ঢুকে পড়ে। সেই পরিস্থিতিতে শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে বাধ্যে হয়ে উপত্যকায় ভারতীয় সেনা পাঠান লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। এই যুদ্ধে সাফল্য আসে ভারতের ঘরেই।

খুব অল্প সময়ের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে আসীন হলেও তিনি শিখিয়েছেন মাথা উঁচু করে বাঁচার কথা। তিনি তাঁর শেষ নিঃশ্বাস অবধি সংগ্রাম করেছেন যাতে ভারত এবং ভারতীয়রা কখনও কারোর পায়ে না পড়েন।

দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে তাঁর জন্ম দিবসে শতকোটি প্রণাম জানায় এখন সংবাদ পরিবার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন