এগরা পৌরসভার গাড়ির বিল ২২ লক্ষ টাকা!

 





 পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিট গঠনের দাবি জানালেন এলাকার বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ।তাঁর অভিযোগ  গাড়ির বিল গত ন'মাসে ২২ লক্ষ ১১ হাজার টাকা। বাল্ব কেনা বাবদ খরচ হয়েছে ১৫ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। জেরক্স আর প্রিন্টিং খাতেই চলে গিয়েছে আরও ৪ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। মশা মারার তেল কিনতে খরচ হয়েছে সাত লক্ষ টাকা। গত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ন' মাসের এই খরচের বহর দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা । 



গত বৃহস্পতিবার পুরসভায় বাজেট বৈঠক ছিল। সেই বৈঠক উপলক্ষে পুরসভার কর্মী ও অফিসাররা আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়ে রিপোর্ট বানিয়েছেন। সেই রিপোর্ট দেখে বৈঠকে অনেকেই চমকে যান।এগরা পুরসভার মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ১৪টি। একটি 'ই' ক্যাটাগরির পুরসভা। বিরোধী কাউন্সিলারদের দাবি, গোটা ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার। তাতে সবটা স্পষ্ট হবে।


রাজ্যের সব পুরসভার মতো এগরা পুরসভাতেও আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নানা প্রকল্পে ঠিকমতো টাকা দিচ্ছে না। যে কারণে শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় সার্বিক উন্নয়নের কাজকর্ম বাধা পাচ্ছে। এই অবস্থায় পুরসভা নিজস্ব তহবিলের টাকা বেহিসাবি খরচ করছে বলে অভিযোগ। বাজেট বৈঠক উপলক্ষে আয়-ব্যয়ের তথ্য সামনে আসতেই সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। 


পুরসভায় একমাত্র চেয়ারম্যান স্বপনকুমার নায়ক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। আর কেউ সরকারি গাড়ি পান না। যদিও পুরসভার কাজে সুডার অফিস কিংবা তমলুক সিএমওএইচ অফিস, কাঁথি কোর্টে যেতে হলে তখন গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু, দৈনিক গাড়ি ভাড়ার প্রয়োজন হয় না। তাহলে গত ন'মাসে কী করে গাড়ির বিল ২২ লক্ষ ১১ হাজার টাকা হল তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। গড়ে প্রতিদিন এগরা পুরসভা ৮১৯১ টাকা গাড়ির বিল মিটিয়েছে। এর বাইরে


রোলার, ট্রাক্টরের মতো গাড়ির জন্য ১৭ লক্ষ ২৭ হাজার ৩১৯ টাকার বিল হয়েছে। শুধু গাড়ি নয়, চমক রয়েছে বাল্ব ও অন্যান্য বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম কেনাকাটাতেও। কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০২২ সালে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরসভার ১৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ২২০ টাকা মূল্যের ওই সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। অথচ, তার আগে ২০২১-২২ সালে ১৪ লক্ষ ৮২ হাজার ৭৮ টাকা মূল্যের ওই সামগ্রী কেনা হয়েছিল। এক বছরের মধ্যে আবারও সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকার কী সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, তা নিয়ে কাউন্সিলারদের অনেকেই পুরসভার বক্তব্য জানতে চাইছেন। এর বাইরে ৬ লক্ষ ১৭ হাজার ১৬৬ টাকা দিয়ে পুরসভা এলাকার এলইডি লাইটের বিদ্যুতের বিল মেটানো হয়েছে।


মশা মারার তেল ও যন্ত্রপাতি কিনতেই ন'মাসে পুরসভা খরচ করেছে ৬ লক্ষ ১৯ হাজার ১৯৩ টাকা। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও বাস্তবে এমনটাই খাতায় কলমে দেখানো হয়েছে। আর, প্রিন্টিং-জেরক্স বাবদ খরচ শুনে অনেকেই আকাশ থেকে পড়ছেন। এজন্য চার লক্ষ ১৯ হাজারের খরচ দেখিয়েছে পুরসভা।


পুরসভার বিরোধী দলনেতা অম্বিকেশ মাইতি বলেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে পুরসভা কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট বক্তব্য সামনে আসা উচিত। এত বিপুল খরচ স্বাভাবিক ভাবে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন তুলছে।


পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, পুরসভার বিভিন্ন কাজে গাড়ি ভাড়া নিতে হয়। এজন্য এজেন্সি আছে। তারা সাপ্লাই করে। সেইমতো বিল হয়। এখানে অনিয়মের কিছু নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাই। যেখানে প্রয়োজন সেখানে খরচ করা হয়েছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন