ভারতের তরল গতিবিদ্যা গবেষণার জনক সতীশ ধবনকে শ্রদ্ধাঞ্জলী ।

                                   সুস্মিত মিশ্র      


তাঁর নামেই শ্রীহরিকোটার স্পেস সেন্টারের নাম।চেন্নাই শহরের ৮০কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটির আদি নাম শ্রীহরিকোটা রেঞ্জ বা শ্রীহরিকোটা লঞ্চিং রেঞ্জ।গত ১৪
জুলাই দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে ইসরোর বহু প্রতীক্ষিত চন্দ্রযান-৩ মিশনের সূচনা হয় এখান থেকেই। ২০০২ সালে ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সতীশ ধবনের মৃত্যুর পর এই কেন্দ্রের
নাম পরিবর্তন করা হয়। তাঁকে ভারতে পরীক্ষামূলক তরল গতিবিদ্যা গবেষণার জনক বলা হয়।
১৯২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শ্রীনগরে একটি সারাইকি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ।সতীশ ধবন লাহোর ও কাশ্মীরে বড় হয়েছেন।বরাবরই পড়াশোনায়
মেধাবী ছাত্র ছিলেন সতীশ। একাধিক ডিগ্রি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে স্নাতোকত্তরের পাশাপাশি, অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিই-ও পাশ করেছেন এই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে
স্নাতোকত্তর সম্পূর্ণ করেছেন। ক্যালটেক থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিতে পিএইচডি সম্পূর্ণ করেছেন।
নিজেকে গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ছিল একেবারেই না পসন্দ। জ্ঞানের পরিধিকে বাড়ানোই ছিল বরাবরের পছন্দের। শুধু বিজ্ঞানেই নয় তাঁর জ্ঞানের পরিধি ছিল বিশাল।১৯৫১ সালে
ভারতের বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে সিনিয়ার সায়েন্টেফিক অফিসার পদে যোগ দেওয়ার পর থেকে আর তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়নি।প্রায় ১৭ বছরের বেশি সময়
ধরে এই সংস্থায় কাজ করেছেন সতীশ। আর দীর্ঘ সময়ে সংস্থার উন্নতিতে একাধিক কাজ করেছেন।প্রতিষ্ঠা করেছেন ASTRA বা Cell for Application of
Science and Technology to Rural Areas এবং CES বা Centre for Ecological Sciences-এর মতো সংস্থা।  
১৯৭১ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাত্র ৫২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় প্রয়াত হলেন ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বিক্রম সারাভাই।সারাভাইয়ের অকাল প্রয়াণের পর এই সংস্থার
সব দায়িত্ব সেদিন অধ্যাপক ধাওয়ানকে নিতে বললেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।এই দ্বায়িত্ব নিতে পাল্টা শর্ত দিয়েছিলেন সতীশ ধবন। হিন্দুস্তান এয়ারক্র্যাফ্ট
 লিমিটেড ও অ্যারোনটিস্ক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যেতে হবে ।শর্ত মেনেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

২০০২ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়া স্পেস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ইসরোতে তাঁর সময়কালেই সোভিয়েত রকেট ব্যবহার করে ভারতের প্রথম দু'টি উপগ্রহ ১৯৭৫ সালে
 আর্যভট্ট এবং ১৯৭৯ সালে ভাস্কর পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছিল সর্বপ্রথম এসএলভি ।১৯৭১ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক
সম্মান পদ্মভূষণ,১৯৮১ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ-এ সম্মানিত করা হয় তাঁকে।এছাড়াও জাতীয় সংহতির জন্য ১৯৯৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে
ভূষিত করা হয়।এছাড়াও সারা জীবনে একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

২০০২ সালের ৩ জানুয়ারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিজ্ঞানী।তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাঁর নামেই শ্রীহরিকোটার স্পেস সেন্টারের নাম রাখা হয়।জন্ম দিবসে দেশের মহান বিজ্ঞানী
সতীশ ধবনকে জন্ম দিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন করছে এখন সংবাদ পরিবার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন