বাংলা ১৩১০ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে অর্থাৎ ইংরেজী ১৯০৩ খ্রীস্টাব্দের মে মাসে কাঁথি শহরের সুবিখ্যাত, ঐতিহ্যবাহী ' নীহার ' প্রেস থেকে ' রেণু ' নামে একটি সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল । মাত্র একটি সংখ্যা প্রকাশিত হলেও এই সাহিত্যপত্রটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম । প্রাপ্ত তথ্যানুয়ায়ী, অখন্ড কাঁথি মহকুমার প্রথম সাহিত্যপত্র ছিল এটি । এই ' রেণু ' সাহিত্যপত্রের সম্পাদক তৎকালীন কাঁথি শহরের বাসিন্দা গিরিজাকুমার বসু ( ১৮৮২-১৯৪৫ ) ছিলেন সুবিখ্যাত লেখক ' ফাস্টবুক ' রচয়িতা প্যারীচরণ সরকারের দৌহিত্র ও শিবরাম বসুর পুত্র। পিতার কর্মসূত্রে তিনি কাঁথি শহরের বাসিন্দা ছিলেন । মফ:স্বল কাঁথির তৎকালীন কয়েকজন সমমনস্ক সাহিত্যসেবীদের নিয়ে গিরিজাকুমার ও তাঁর স্ত্রী তমাললতা দেবী এই ' সাহিত্যপত্র ও সমালোচনী' টি প্রকাশ করেন । পরবর্তীকালে এই দম্পত্তি উভয়েই সাহিত্যিক হিসেবে বাংলার সাহিত্যজগৎ -এ পরিচিত হয়ে ওঠেন । রেণু সাহিত্যপত্রটির প্রকাশক হিসেবে গিরিশচন্দ্র দাস ও লেখক হিসেবে সম্পাদক গিরিজাকুমার বসু, তমালতরু বসু ছাড়াও তরুনকৃষ্ণ চাকী, ঈশ্বরচন্দ্র পড়্যা, সতীশচন্দ্র ঘোষ, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় প্রমুখদের নাম জানা যায় । কাঁথির প্রথম এই বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যপত্র ' রেণু ' ও তার তরুণ লেখকগোষ্ঠী নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলো কাঁথি রেডক্রশ সোসাইটির সভাগৃহে অবিভক্ত মেদিনীপুরের অন্যতম প্রাচীন ইতিহাস চর্চার প্রতিষ্ঠান ' হিজলী -কাঁথি ইতিহাস রচনা সমিতি ' ( ১৯০৯ ) -র উদ্যোগে। বৈকালিক এই আলোচনা সভায় পৌরহিত্য করেন রেডক্রশ কাঁথি মহকুমা শাখার সম্পাদক ডা. দিলীপ কুমার দাস ও প্রধান অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অমলেন্দু বিকাশ জানা । এছাড়াও উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্টজনেদের মধ্যে কৃষ্ণপদ পঞ্চাধ্যায়ী, কৌস্তভকান্তি মাইতি, রথীন্দ্রনাথ পতি, অধ্যাপক হৃষিকেশ পড়্যা, স্নেহাশীষ পাহাড়ী, সমরবরণ মান্না, জগদীশ দীন্ডা, তুলসী জানা প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায় । আয়োজক সংস্হার পক্ষে আহ্বায়কদ্বয় সুমন নারায়ন বাকরা ও সুদর্শন সেন, অখন্ড কাঁথির প্রথম এই সাহিত্যপত্র প্রকাশের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে বিস্তৃত আলোচনা করেন । উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে অধ্যাপক অমলেন্দু বিকাশ জানা ও অধ্যাপক হৃষিকেশ পড়্যা ১২২ বছর আগে কাঁথির মত প্রত্যন্ত একটি মফ:স্বল থেকে এই সাহিত্যপত্রটির প্রকাশকে একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেন । উপস্থিত অন্যান্য সকলেও এই ধরনের ঐতিহাসিক স্মরণ উদ্যোগের গুরুত্ব স্বীকার করে ভূয়সী প্রশংসা করেন । অনুষ্ঠানে একটি স্মারকপত্র প্রকাশিত হয় ও কাঁথির প্রথম দুই সাময়িক ও সাহিত্যপত্র ' কান্তি ' (১৮৯৬-৯৭) ও ' রেণু ' (১৯০৩ )-তে প্রকাশিত দুষ্প্রাপ্য লেখাগুলি নিয়ে একটি সংকলনগ্ৰন্হ প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
Tags
সাহিত্য