নেতাজি-ঘনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী হেমন্ত কুমার বসুকে শ্রদ্ধাঞ্জলী।

                                            সুস্মিত মিশ্র

জাতশত্রু হিসাবে পরিচিত ছিলেন দলে। রাস্তায় দেখা হলে লোকজন প্রণাম করত পায়ে হাত দিয়ে। সেই মানুষটাকেই খুন করা হয়েছিল কলকাতার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে। নকশাল আন্দোলন চলাকালীন ১৯৭১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মহানগরীর রাস্তায় একদল যুবকের হাতে ছুরিকাহত হয়ে মারা গেছিলেন নেতাজি-ঘনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী হেমন্ত কুমার বসু।

১৮৯৫ সালের ৫ অক্টোবর উত্তর কলকাতায় জন্ম গ্রহন করেন হেমন্ত কুমার বসু। পিতা পূর্ণচন্দ্র বসু ও মাতা আনন্দসুন্দরী।১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের আন্দোলনের সময় তার মনে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত হয়। মাত্র দশ বৎসর বয়সেই স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরের বছর অনুশীলন সমিতির সদস্য হন।

১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রাবস্থায় বর্ধমানে বন্যাদুর্গতদের ত্রানকার্যে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও বাঘা যতীনের নেতৃত্বে বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন। অরবিন্দ ঘোষ, চারু রায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখের সঙ্গে আত্মগোপন করে থাকেন। ওই বছরেই সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। শেষপর্যন্ত ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথাগত শিক্ষায় ছেদ পড়ে। কলেজ ত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হন।

১৯৩০ সালের মহিষবাথান লবণ আন্দোলন, ১৯৩১-এর আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা দিবস পালন করার জন্য কারাবরণ করেন তিনি। দুবছরের ছোট সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে হেমন্তের আলাপ ততদিনে গড়িয়ে গেছে প্রবল বন্ধুতায়। ১৯২৮ সালে নাগাদ কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনের জন্য সুভাষচন্দ্র যে বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, তারই অন্যতম ছিলেন হেমন্ত কুমার।

হরিপুরা অধিবেশনে   তিনি সুভাষচন্দ্রকে সমর্থন করেছিলেন ৷ ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠায় বন্ধু সুভাষের সঙ্গে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। সুভাষচন্দ্র গোপনে দেশত্যাগ করার পর ব্রিটিশ পুলিশের বিষনজর পড়ে হেমন্ত কুমারের উপর। সবার আগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। 
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য বিধানসভার সদস্য হন। কংগ্রেস সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ছিলেন ।১৯৪৮ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে বিধানসভার সদস্যপদে ইস্তফা দিলেও পুনরায় নির্বাচিত হন। এরপর প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থীরূপে জয়ী হয়েছেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী সভার পূর্তমন্ত্রী হন। গোয়া মুক্তি আন্দোলন, ট্রাম আন্দোলন,  খাদ্য আন্দোলন-সহ  বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণ করেছেন বহুবার। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মন্ত্রীত্বগ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

হেমন্ত কুমার বসু ছিলেন এক আপসহীন সংগ্রামী। কোনওকিছুই দমাতে পারেনি তাঁকে।এখন সংবাদ পরিবার তাঁকে জানায় শতকোটি প্রণাম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন