রাজা মাইতি:-পশ্চিমবাংলার গঙ্গাসাগর মেলার পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাদপুর গ্রামের মনসা মায়ের মেলা পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার খড়গপুর লোকাল থানার তিন নম্বর লজমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবিন্দ নগর মৌজা মহিষা গ্রামে এই মনসা দেবীর মন্দির।
প্রায় 400 বছর আগে এই মহিষা গ্রামটি ছিল জকপুরের জমিদার যোগেশ্বর রায়ের জমিদারির অন্তর্গত।
জমিদার যোগেশ্বর রায় একদিন ভোররাতে মা মনসার স্বপ্নাদেশ পান। তিনি দেখেন যে চতুর্ভুজা মা মনসা হাত নেড়ে তাকে বলছেন মহিষা গ্রামের ওই জঙ্গলে উই ঢিপিতে তিনি বিরাজ করছেন। তাঁকে যেন পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে পুজো করা হয়।
সূর্যোদয়ের পরে জমিদার সদলবলে গিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ওইখানে মনসা মায়ের নিয়মিত পূজার ব্যবস্থা করেন। ওই উই ঢিপিতেই মা অবস্থান করেন। পরে ওই উই ঢিপিটিকে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়। ওই উই ঢিপির মাটি নিয়ে পাশে একটি লাল পদ্ম একটি লাল পদ্ম ফুল বানানো হয়। এই পদ্মফুল আসলে দেবী মনসার প্রতীক।
এই মন্দিরটিতে প্রথম থেকেই যেভাবে খোলা আকাশের নিচে মায়ের আরাধনা শুরু হয়েছিল সেই প্রথা এখনও চলে আসছে কারণ তিনি আদেশ দেন যে তিনি আবদ্ধ ঘরে থাকতে নারাজ। তাই মন্দির নির্মাণ করলেও মাথায় কোন আচ্ছাদন থাকবে না। যতবারই মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে ততবার'ই মন্দির ভেঙে পড়েছে।
মায়ের ভক্তরা সারা বছর ধরে মায়ের পুজো দিলেও সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার ভক্তদের ভিড় বেশি হয়। এখানে ভক্তরা উই ঢিপি ও পদ্মফুলে ফুল, দুধ-কলা, সিঁদুর মাখিয়ে নিজেরাই পুজো করেন। এখানে এই মন্দিরে মনসা মায়ের কোন মূর্তি। নেই কোন পান্ডা বা পুজারী।
মায়ের নির্দেশে ভক্তরা নিজেদের পুজো নিজেরাই করেন এবং মনস্কামনা জানান।
চৈত্র মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার এখানে বিশাল মেলা বসে যা পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় বৃহত্তম বেলা বলে মনে করা হয়। এই বিশেষ দিনে ওই গ্রামের কারোর বাড়িতে উনুন জ্বলে না। রান্না হয় পরের দিন।
চক্রবর্তী পদবিধারী ব্রাহ্মণরা পুজো করেন। কোন মন্ত্র উচ্চারিত হয় না। কেবল ব্রাহ্মণ উৎসর্গ করে যান।
এই বিশেষ দিনের বিশেষত্ব হলো ছাগ বলি।
প্রায় 30000 ছাগল বলি দেয়া হয় এই দিনে। এছাড়া মনসা দেবীর মন্ত্রপূতঃ জলে স্নান করিয়ে হলুদ মাখিয়ে অসংখ্য পায়রা উড়িয়ে দেওয়ার রীতি এখানে রয়েছে। এখানে হাঁস বলিও হয়। কখনো কখনো হাঁস গুলিকে সামনের পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আগেকার দিনে মানুষ এই মন্দিরে সাপের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই মনসা দেবীর পূজা করত। ভক্তরা পুত্র লাভের আশায়, বেকাররা চাকরির আশায় বা রোগ ব্যাধি নিরাময় ও সাংসারিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মায়ের কাছে পুজো দেন।
বিঃদ্রঃ
চৈত্র মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার
মহামেলা হয়। আগামী ২০ চৈত্র মঙ্গলবার ( ৪/৪/২৩)
Tags
উৎসব