বাগুইআটি সহজিয়ার শিশুদিবস পালন




 শিশু দিবসে থিয়ে-এপেক্সে এক মনোরম সন্ধ্যা দর্শকদের উপহার দিল বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থা। দর্শকরা নিজেদের ফেলে আসা ছেলেবেলাকে যে টাইমমেশিনে চেপে ঘুরে এসেছিল, সন্দেহ নেই।


তা-তা থৈ থৈ --- উদ্বোধনী নৃ্ত্য।


 প্রথমেই,  শালিনী বোসের নির্দেশনায় ছোট্ট বেদাশ্রী বোসের উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে সূচনা হয় এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের। 




ছোট্টবেলার গান।


তারপরেই রাখালিয়া বাঁশির মেঠো সুরে আমাদের ছোটোবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছোট্ট কৃত্তিকা বোস। তার সুরেলা কন্ঠের যাদুতে সে জায়গা করে  নিয়েছে উপস্থিত দর্শকদের মনের অন্দরে। মায়ের মমতার আঁচল আর ঘুমপাড়ানি গান, বাবার ব্জ্রকঠোরতার আড়ালে লুকানো ভালোবাসা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ভাগ করে খাওয়া টিফিন --- এসবই ছিল কৃত্তিকার গানের বিষয়ে। তাকে  সিন্থেসাইজারে যোগ্য সহযোগিতা করেছে জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জী। সুত্রধরের ভূমিকায় সম্রাজ্ঞী সাহা।





ভেন্ট্রিলোকুইজিম।


পরবর্তী চমকে ছিল ঋকদীপ পালের ভেন্ট্রিলোক্যুইজম। ঋকদীপ ও তার কথা-বলা পুতুল বন্ধু "চমচমকুমার"-এর চমৎকার যুগলবন্দি আনন্দে মজিয়ে দিয়েছিল উপস্থিত দর্শকদের। 





নাটক : একলা মন।


এরপর অনুষ্ঠানের প্রধাণ আকর্ষণ --- সহজিয়া প্রযোজিত নাটক "একলা মন" মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকের রচনা ও নির্দেশনা  প্রশান্ত সেনের। দশ বছরের মেয়ে প্রত্যুষা সেন তার একক অভিনয় দক্ষতায় কখনো মাতিয়েছে, কখনো কাঁদিয়েছে উপস্থিত দর্শকদের। 

চাকুরিজীবী মা-বাবার একমাত্র মেয়ে হয়েও অবহেলিত, উপেক্ষিত তাদের বছর দশেকের ছোট্ট মেয়ে 'মন'। সে ভুলে থাকে তার একাকীত্ব তার কল্পনার জগতে, তার প্রিয় খেলনা আর পুতুলদের নিয়ে। পুতুলদের সে গালভরা নামও দিয়েছে --- কঙ্কাবতী, ঝিন্টিরানি, খ্যান্তাবুড়ি। এভাবেই নিজের ছোট্ট রঙিন জগৎ নিয়েই সে খুশি থাকে নিজের মতো করে। কিন্তু তার বাবা আর মা সারাদিনই ব্যস্ত অফিস আর অন্যন্য কাজ নিয়ে। তাই তো ছোট্ট মনের বড়ো অভিমান। এরপর আসে অতিমারিজনিত লকডাউনের বন্দি দশা, আম্ফানের ক্ষিপ্ত প্রকৃতির ভয়াবহতা। মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা কেমন যেন এলোমেলো, বিধ্বস্ত! কিন্তু এই প্রতিকুলতা কি কোনো পরিবর্তন ঘটাল মনের জীবনে? সে কি ফিরে পেল তার মা-বাবার তাকে দেওয়া অমূল্য সময়? আমাদের অনেক জ্বলন্ত প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় সহজিয়ার "একলা মন"।

সংলাপ, গল্পের গতি, মঞ্চভাবনা ও নির্মাণ, আলোকসম্পাত, আবহ ও শব্দ পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি ছোট্ট প্রত্যুষার সাবলীল স্বাভাবিক অভিনয় --- সব বিভাগেই নাটকটি যথেষ্ট সফল। নাটকে ব্যবহৃত গানের রচনা নাট্যকার প্রশান্ত সেনের এবং তাতে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছে অর্ণিশা সেন। লাইভ সিন্থেসাইজারে জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জী যথেষ্ট প্রশংসনীয়। মঞ্চনির্মানে তন্ময় মণ্ডল, সুদান হালদার ও সহজিয়ার অন্যান্যরা যথাযথ। পোশাক  ও রূপসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন দীপা রায় ও সম্রাজ্ঞী সাহা।





সমবেত নৃত্য।


সবশেষে সহজ-কচিকঁচাদের কিচিরমিচির, জমাটিয়া সমবেত নাচ আর লজেন্স কাকু তন্ময় মণ্ডলের মজার উপস্থিতি যেন উপভোগ্য কেকের ওপর সাজানো রঙিন টপিংস।





সমগ্র অনুষ্ঠানটির আলোক সম্পাত করেছেন সুবল কর্মকার। সঞ্চালনায় ছিল সম্রাজ্ঞী সাহা।


বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থার কর্ণধার শ্রী প্রশান্ত সেন বলেন, "অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ছোটদের নিয়ে একটা কাজ করার। আজ শিশু দিবসে শিশুরা একটা জমাটিয়া সন্ধ্যা উপহার দিল আমাদের। ভবিষ্যতে ছোটোদের নিয়ে আরো কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দিল আমাদের পরিবারের ক্ষুদে সদস্যরা।"


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন